ছোট মাছ খাওয়ার উপকারীতা
সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকার প্রধান শর্ত হচ্ছে সুষম খাবার গ্রহণ। সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো হলো আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি। আমিষের একটি ভালো উৎস হলো মাছ। মাছের মধ্যে আবার ছোট মাছ অতুলনীয় পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষায় গ্রামে-গঞ্জের পুকুর, মাঠ, খাল-বিল, হাওর ও নদ-নদীতে অনেক ছোট মাছ পাওয়া যায়। এসব ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণ কম নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ থাকে ১৪-১৯ ভাগ। মাছের আমিষ হলো উন্নত মানের আমিষ। শিশু থেকে প্রবীণ সবাই নিশ্চিন্তে ছোট মাছ খেতে পারে।
আরো পড়ুন
ছোট মাছে বড় মজা
ছোট মাছে বড় মজা
দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোসহ শরীরের বিভিন্ন উপকার করে এসব ছোট মাছ। তাহলে জেনে নিন ছোট মাচ খাওয়ার উপকারিতা।
ছোট মাছ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
ছোট মাছ চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মলা, ঢেলা, চান্দা, পুঁটি, টেংরা, কাঁচকি, বাতাসি মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন ডি রয়েছে। যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে বলে জানান পুষ্টিবিদরা। এ ছাড়া ছোট মাছে মজুদ থাকা আমিষ চোখের নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
আমিষের ঘাটতি মিটাবে
ছোট মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ রয়েছে। এই আমিষ খুব সহজেই শরীর গ্রহণ করে নেয়। তাই দেহে আমিষের ঘাটতি মেটাতে চাইলে প্রতিদিন ছোট মাছ খেতে হবে। কারণ এসব মাছে ফ্যাটের তুলনায় আমিষের পরিমাণই বেশি থাকে। তাই নিয়মিত এসব মাছ খেলে ইমিউনিটি থেকে শুরু করে পেশির জোর বাড়বে। এমনকি একাধিক রোগব্যাধিও দূরে থাকবে।
হাড় মজবুত হবে
আজকাল অনেকেই কম বয়সে হাড়ের ক্ষয়জনিত অসুখ বা অস্টিওপোরোসিসের সমস্যায় ভোগেন। এ ধরনের সমস্যায় পড়লে সামান্য হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। এ কারণে যেভাবেই হোক হাড়ের জোর বাড়তে হবে। এই কাজে সাহায্য করবে ছোট মাছ। কারণ এই মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা হাড়ের শক্তি বাড়ায়। এ কারণে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছোট মাছ রাখবেন।
আরো পড়ুন
গৃহস্থালি কাজের পর হাত খসখসে? দূর করবেন যে উপায়ে
গৃহস্থালি কাজের পর হাত খসখসে? দূর করবেন যে উপায়ে
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ছোট মাছের মাথা খেতে পারেন। কারণ মাছের মাথায় অত্যন্ত উপকারী কিছু ফ্যাটি এসিড আছে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। এই কারণে বাড়ে স্মৃতিশক্তি। তাই একদম ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মাছের মাথা খাওয়ান। ছোট মাছ সম্পূর্ণ চিবিয়ে খাওয়া সম্ভব, কোনো কিছুই বাদ যায় না। ফলে পুষ্টির সবটুকু উপাদান আমরা সেখান থেকে পাই। বড় মাছের মতো পুষ্টির অপচয় হয় না ছোট মাছে।
গর্ভের শিশুর গঠন বৃদ্ধি
গর্ভবতী মায়েরা ছোট মাছ খেলে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও গঠন ভালো হয়। মায়ের বুকের দুধ তৈরির জন্য তাদের প্রতিদিনের খাবারে আমিষের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। এ জন্য তাদের খাদ্যতালিকায় ছোট মাছ রাখা দরকার। পাশাপাশি এ মাছে থাকা প্রচুর ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখে। জন্মের পর শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’, খনিজ লবণের প্রয়োজন হয় খুব বেশি।
রাতকানা রোগের প্রতিকার
ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়। রাতকানা রোগে ভোগে। সে জন্য খাদ্যতালিকায় ছোট মাছ রাখা আবশ্যকীয়।
আরো পড়ুন
রান্নাঘরে মাছির উপদ্রব ঠেকাবেন যে উপায়ে
রান্নাঘরে মাছির উপদ্রব ঠেকাবেন যে উপায়ে
এ ছাড়া ছোট মাছ বড়দের হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখা ও শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশেও সহায়ক। ছোট মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকায় শরীরের জন্য বেশ উপকারী। অপরদিকে আমাদের দেশে নারীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে অনেকের। রক্তস্বল্পতা দূর করতে টেংরা মাছ বেশ উপকারী। এ ছাড়া কাশির সমস্যার জন্যও টেংরা মাছ সাহায্য করে।
মনে রাখা জরুরি, ছোট মাছ সাধারণত কোনো রোগে নিষেধ নয়। উপকারী আমিষ ও ফ্যাট থাকায় এটি সব বয়সেই নিরাপদ। এতে অ্যালার্জির ঝুঁকিও কম। তবে ছোট মাছে বেশি তেল-মসলা মেশাবেন না। এতে মাছে মজুদ থাকা পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে মাছ খেয়েও উপকার মিলবে না। এ কারণে অল্প তেল ও মসলা দিয়ে ভাঁপিয়ে মাছ রান্না করুন। এতেই উপকার মিলবে।