লাকসামে আকস্মিক বন্যা, আশ্রয়কেন্দ্রেও ঠাঁই হয়নি অনেকের!
টানা ভারি বর্ষণে এবং উজানের পানি নেমে আসায় লাকসাম উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। অনেকে গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি কিছুটা থামলেও পানি বেড়েই চলছে। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগের সীমা নেই। শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানে চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন তাঁরা। কিছু কিছু সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার, খাওয়ার স্যালাইন দিলেও তা ছিল খুবই অপ্রতুল। এসব কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সামগ্রি দেওয়া হয়নি।
কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠও পানিতে তলিয়ে গেছে। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। লাকসাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবাব ফয়েজুন্নেসা ও বদরুন্নেসা যুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়, গাজিমুড়া কামিল মাদরাসা, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, গুন্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল আমিন ইনস্টিটিউট, উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ মালেক ইন্সটিটিউশান (রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়), নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন বন্যাকবলিত মানুষ।
উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বেতিহাটি, লক্ষীপূর, গোবিন্দপুর. কান্দিরপাড় গ্রামের প্রায় তিন শ পরিবার ওঠেছে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সেখানে জায়গা না পেয়ে নিরূপায় হয়ে আবার বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে আকস্মিক সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, শত শত পুকুর-দীঘি, জলাশয় ও মাছের ঘের। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা। লাখ লাখ টাকার লোকসান হওয়ায় এখন তাদের মাথায় হাত।
এদিকে উপজেলার বাকই (দক্ষিণ), উত্তরদা, কান্দিরপাড়, মুদাফরগঞ্জ (দক্ষিণ), মুদাফরগঞ্জ (উত্তর), লাকসাম (পূর্ব), আজগরা, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে শতাধিক গ্রামের মানুষ এবং পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তলিয়ে গেছে কৃষকদের বহু বীজতলা। ফলে কৃষকেরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ওইসব গ্রামগুলোতে মাছচাষিদের পুকুর-দীঘি ও মাছের ঘেরগুলো ভেসে যাওয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
অপরদিকে লাকসাম পৌরসভার বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে গাজিমুড়া, ধামৈচা, সাতবাড়িয়া, উত্তরকূল, গুন্তি, গোপালপুর, কুন্দ্রা, বাইনচাটিয়া, বিনয়ই, কোমারডোগা, গন্ডামারা, রাজঘাট, আমুদা, উত্তর পশ্চিমগাঁঁও, বাতাখালীসহ কয়েকটি এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওইসব এলাকার মানুষজন।
লাকসাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এ ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানান, গত কয়েকদিনে টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের পানি নেমে আসার ফলে উপজেলা পরিষদ চত্বরেও পানি ওঠেছে।
তিনি বলেন, আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত মানুষকে সংশ্লিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিরাপদ অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।