বাড়ির মালিক লতিফের তথ্যের ভিত্তিতে ও বরমি শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়নি সুমাইয়ার লাশ
গাজীপুরে প্রায় পাঁচ মাস আগে গুম হওয়া এক কারখানা শ্রমিকের মরদেহের সন্ধান মেলেনি। গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর স্বামীর তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুরে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা দুই দফা অভিযান চালান।
গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত সুমাইয়ার লাশের খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।
শ্রীপুর পৌরসভার বেরাইদের চালা এলাকায় আব্দুল লতিফের বহুতল ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্কের নিচে আরসিসি ঢালাই করে শ্রমিক সুমাইয়া আক্তারের লাশ গুম করে রাখে তাঁর স্বামী আবু হানিফ। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর হানিফের এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামে র্যাব ও পুলিশ। প্রথমে ওই ভবনের নিচতলায় আরসিসি ঢালাই ভেঙে সুমাইয়ার লাশ খুঁজতে শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। টানা ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সেখানে লাশের খোঁজ মেলেনি। পরে গ্রেপ্তার হওয়া বাড়ির মালিক আব্দুল লতিফের তথ্যের ভিত্তিতে শীতলক্ষ্যা নদীতে উপজেলার বরমী এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানেও পাওয়া যায়নি মরদেহ।
র্যাব-১ জানিয়েছে, হানিফ তাঁর স্ত্রীর লাশ বন্ধু আনিছুর রহমানের সহযোগিতায় আব্দুল লতিফের বাড়ির নিচে ঢালাই করে গুম করে রেখেছিল। লতিফও সহযোগিতা করেছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করেন র্যাব-১ এর সদস্যরা।
জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ এলাকার বাসিন্দা হানিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার আমিরগঞ্জ গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া। আড়াই বছর আগে সংসার পাতেন তারা। থাকতেন বেরাইদের চালা এলাকায়। এরই মধ্যে সুমাইয়া জানতে পারেন, তাঁর স্বামী হানিফ দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে দিয়েও দেহ ব্যবসা করানোর চেষ্টা করে। এতে সুমাইয়া রাজি হননি। এক দিন সুমাইয়াকে বাধ্য করার চেষ্টা করা হলে তিনি রাগ করে এক স্বজনের বাড়িতে চলে যান। পরে নানা কৌশলে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় আবার সুমাইয়াকে ভাড়া বাসায় আনে হানিফ। এর পর থেকে স্বজনদের সঙ্গে সুমাইয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মেয়ের সন্ধান না পেয়ে গত ২৬ জুলাই সুমাইয়ার মা তাসলিমা আক্তার শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে গত শুক্রবার তাসলিমা শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। মামলার আসামি করা হয় সুমাইয়ার স্বামী হানিফ ও তার বন্ধু জয়নাল আবেদীনকে। মামলাটি ছায়াতদন্তে নামে র্যাব-১। আবু হানিফ, তার বন্ধু আনিসুর রহমান ও বাড়ির মালিক আব্দুল লতিফকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব-১ সদস্যরা।
আবু হানিফ র্যাবকে জানায়, সুমাইয়ার লাশ লতিফের বাড়ির নিচে সেপটিক ট্যাঙ্কে আরসিসি ঢালাই করে গুম করা হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল লাশের সন্ধানে অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-১ এর গাজীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর জন্নুরাইন বিন আলম জানান, প্রায় ৪ ঘণ্টা সেখানে অভিযান চালিয়ে সুমাইয়ার লাশের খোঁজ মেলেনি। পরে গ্রেপ্তার লতিফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শীতলক্ষ্যা নদীতে অভিযান চালানো হয়। জন্নুরাইন বলেন, বাড়ির নিচে রাখার তিন দিন পর লতিফ লাশটি অন্য স্থানে সরিয়ে ফেলে। একটি ভ্যানে করে লাশটি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় বলে সে জানায়। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার আরও রহস্য বেরিয়ে আসবে। সুমাইয়াকে কী হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে, নাকি অন্য কিছু করা হয়েছে সেটাও জানা যাবে।
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, প্রায় ৫ মাস আগে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া লাশের হদিস পাওয়া যায়নি। তারা আবারও অভিযান চালাবেন।